Blog

নদীর আইনী সত্তা

নদীর আইনী সত্তা

এডভোকেট মনজিল মোরশেদের একটা রীটের সূত্র ধরে বাংলাদেশের তুরাগ নদীকে আইনী সত্তা দেয় আমাদের হাইকোর্ট। মানে হলো মানুষ হিসেবে আমাদর যেমন আইনী সত্তা আছে নদীরও আছে তেমন একটা! রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন এই আইনী সত্তা দেশের অন্যান্য নদীর উপরও কার্যকর হবে।মানে কর্ণফুলী নদীও এ আওতার বাইরে নয়। আইনী সত্তা বলতে মূলত বুঝানো হয়েছে একজন মানুষ যে ধরণের আইনী অধিকার ভোগ করে ঠিক নদীও এখন থেকে সেরকম অধিকার পাবে। হাইকোর্ট বিভিন্ন নির্দেশনাও দিয়েছেন এই রায়ে।

নদী রক্ষা কমিশনকে সমস্ত নদীর উপর অভিভাবকত্ব দেওয়া হয়েছে । স্বভাবতই প্রশ্নই আসা স্বাভাবিক যে কমিশন কী করছে!

চট্টগ্রাম কে দেশের লাইফ লাইন বলা হয় আর চট্টগ্রামের লাইফলাইন এই কর্ণফুলী নদী।অথচ দূষণে- দখলে এ নদী বিপর্যস্ত।হাইকোর্টের নির্দেশনায় এটাও বলা ছিলো নদীর পাড় ঘেষে গড়ে উঠা কলকারখানাগুলোতে আবশ্যিকভাবে ইটিপি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিলো।এই নদীর দূষণে ১৭ টি শিল্প জোনের প্রায় ৩০০ কারখানা সরাসরি জড়িত বলে নদী গবেষকরা মত দিয়েছেন।এছাড়াও সেবা সংস্থা ওয়াসা,কর্ফুলী পেপার মিল এরাও এসব দূষণে জড়িত।কারণ ওয়াসার সুয়ারেজ সিস্টেম এখনো সেঁকেলে। নগরীর ৪০ লাখেরও বেশী মানুষের পয়োঃবর্জ্যের ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্ণফুলী!

একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলার কথা বলি এই পর্যায়ে। চীনে হয়েছিলো এই মামলা। Thaizhou pollution case নামে পরিচিত এটা।এই মামলায় চাইনিজ কোর্ট বিভিন্ন কর্পোরেশনকে নদী দূষণের কারণে ১৬০ মিলিয়ন ইউয়ান ক্ষতিপূরনের আদেশ দিয়েছিলেন।কারণ ঐ কর্পোরেশনগুলো বিভিন্ন সময়ে বিশাল পরিমাণ বর্জ্য চায়নার দুইটি নদীতে ফেলেছিলেন এবং কোর্ট তার রায়ে বলেছিলেন ” এত বছর ধরে যে পরিমাণ বর্জ্য এই নদীগুলোতে ফেলা হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই নদীর স্বাভাবিক আচরণে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে, নদীগুলো তার স্বকীয়তা হারিয়েছে”

একটাবার ভাবুন তো,আমাদের কর্ণফুলী আজ কত বছর ধরে দূষণের শিকার! কি পরিমাণ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে এ নদী থেকে? কোন হিসাব আমরা রেখেছি?
সবসময় বলি ; নদী বাচাঁও, দূষণ হঠাও! কিন্তু এ হিসাবগুলো আমরা কেন করিনি! মনে হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এখন এই হিসাবগুলো করতে পারে! স্থাপনা ভেঙ্গে দিয়ে; হুটহাট লোক দেখানো জরিমানা করে আসলে কিছুই হবে না! Exemplary punishment এর দৃষ্টান্ত স্হাপন করুন চায়নার মত- এত বছর যারা শোষণ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে স্টেপ নিতে পারেন নদী রক্ষা কমিশন।

শুধু মাত্র নদীর আইনী সত্তা ঘোষণা করলেই হয় না; যিনি অভিভাবক উনারও দায়িত্ব থাকে।আমাদের শিল্প কারখানা লাগবে; সেটা কোনমতেই নদীকে মেরে ফেলে নয়!

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন হাইকোর্টের রায় ও নির্দেশনা অনুযায়ী এদেশের সব নদীর অভিভাবক।কর্ণফুলীর নদীর হয়ে দূষণের ক্ষতিপূরণ মামলার অধিকার একমাত্র তাদেরই আছে ; তাই তাদের কাছ থেকেই আমরা পদক্ষেপ চাই |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *